ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে এক উজ্জ্বল ব্যক্তিত্ব মাস্টারদা সূর্য সেন Masterda Surya Sen is a brilliant figure in the history of India's freedom struggle

ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে সূর্য সেন এক উজ্জ্বল ব্যক্তিত্ব।চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠন, জালালা বাদের যুদ্ধ প্রভৃতি দুঃসাহসী ঘটনার সাথে যে বীরস

ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে এক উজ্জ্বল ব্যক্তিত্ব মাস্টারদা সূর্য সেন

 
-:- জন্মঃ ২২শে মার্চ ১৮৯৪ খ্রীঃ -:- মৃত্যু : ১২ই জানুয়ারি ১৯৩৪ খ্রীঃ -:-

 
ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে সূর্য সেন এক উজ্জ্বল ব্যক্তিত্ব।চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠন, জালালা বাদের যুদ্ধ প্রভৃতি দুঃসাহসী ঘটনার সাথে যে বীরসিংহের নাম যুক্ত, তিনি হলেন মাস্টারদা সূর্য সেন।

চট্টগ্রামের নোয়াপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন সূর্য সেন।কিছুটা বিভ্রান্তি আছেসূর্য সেনের জন্ম সময় নিয়ে । অনেকে বলে থাকেন যে, ১৮৯৪ খ্রিস্টাব্দের ২৫ অক্টোবর সূর্য সেন সূর্যের মুখ দেখেছিলেন। আবার কেউ কেউ বলেন, না, ১৮৯৪ সালের ২২ মার্চ সূর্য সেনের জন্ম হয়েছিল।বাবার নাম রাজমণি সেন,মায়ের নাম শশীবালা দেবী। ছয় ভাইবোনের মধ্যে সূর্য সেন ছিলেন চতুর্থ। ছোটো থেকেই ভালোবাসতেন প্রকৃতির ঔদার্য। একা একা ঘুরে বেড়াতেন সমুদ্র সৈকত ধরে। তাঁর চোখে চট্টগ্রাম পৃথিবীর অন্যতম সেরা পর্যটন কেন্দ্র।
 
তার পাঁচ বছর বয়সে বাবা রাজমণি সেনের মৃত্যু হয়। সূর্য সেন বড়ো হয়ে ওঠেন কাকা গৌরমণি সেনের আদর এবং শাসনে।ছোটো থেকেই দুষ্টু স্বভাবের বালক ছিলেন। বন্ধুদের সাথে হৈ-হুল্লোড় করে বেড়াতেন। শহরের লোকেরা তাঁর নামে যখন তখন নালিশ করত। আবার তাঁরা ভীষণ ভালোবাসত বালক সূর্য সেনকে। কারো দুঃখে চুপ করে বসে থাকতে পারতেন না। পকেটের পয়সা বের করে ভিখারির হাতে তুলে দিতেন। ভালোবাসতেন সকলকে। মনুষ্যতর প্রাণীদের প্রতিও ছিল সূর্য সেনের বুকভরা ভালোবাসা।
 
বালক সূর্যকে প্রথমে ভরতি করে দেওয়া হয় গ্রামের দয়াময়ি উচ্চ বিদ্যালয়ে। এই বিদ্যালয়ের পরিবেশ সূর্য সেনের খুব একটা ভালো লাগেনি। এখানকার পরিবেশের মধ্যে কেমন একটা কুসংস্কারচ্ছন্নভাব আছে। এবার সূর্য সেন এলেন হরিশ দত্তের জাতীয় স্কুলে। এই স্কুলের পরিবেশ তাঁর যথেষ্ট ভালো লাগল। মাস্টার মশাই এবং ছাত্রদের মধ্যে সুন্দর সম্পর্ক আছে। মাস্টার মশাইরা পাঠ্য বইয়ের বাইরের বিষয়বস্তু নিয়ে আলোচনা করেন। এই স্কুলে পড়তে পড়তে সেদিনের কিশোর সূর্য সেন পরাধীন ভারতবর্ষের অনেক গল্প জানতে পেরেছিলেন। দেশ জুড়ে চলেছে শোচনীয় অবস্থা। সাধারণ মানুষ দুবেলা দুমুঠো খেতে পারছে না। দারিদ্রতার কষাঘাতে দিশেহারা। একদল মানুষ আনন্দ স্ফূর্তিতে জীবন কাটাচ্ছে। সাত সাগরের পার থেকে উজিয়ে এসে সাহেবরা ভারতকে শাসন করছে। নানা জায়গায় দেখা দিয়েছে আঞ্চলিক বিক্ষোভ। কিন্তু সেই বিক্ষোভ দানা বাঁধতে পারছে না উপযুক্ত নেতার অভাব।
 
১৯১২ সালে এন্ট্রাস পরীক্ষা পাশ করলেন। ভরতি হলেন চট্টগ্রাম কলেজে। এখানেই শুরু হল তাঁর নতুন জীবন। ১৯১৭ সালে বহরমপুর কলেজ থেকে সসম্মানে বি এ পাশ করে ফিরে আসেন চট্টগ্রামে।সূর্য সেন কৈশোর কালেই বিপ্লবী আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলেন। যখন তিনি জাতীয় বিদ্যালয়ের ছাত্র, তখন অম্বিকা চক্রবর্তীসহ আরও কিছু বিপ্লবী নেতার সংস্পর্শে আসেন। ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছিলেন হেমেন্দ্রলাল মুখোটি। তিনি ছিলেন বরিশাল ষড়যন্ত্র মামলার পলাতক আসামি। দুর্গাপুর হাই স্কুলে কিছুদিন শিক্ষকতা করার পর জাতীয় বিদ্যালয়ে যোগ দিয়েছিলেন। তাঁর সংস্পর্শে এসে সূর্য সেন জাতীয়তাবাদের আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়েছিলেন। সূর্য সেন বুঝতে পেরেছিলেন যে, তাঁকে চরিত্র গঠন করতে হবে। কঠিন কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। নিয়মানুবর্তিতাকে পাথেয় করতে হবে।
 
বহরমপুর কলেজের অধ্যাপক ছিলেন বিশিষ্ট বিপ্লবী নেতা সতীশ চক্রবর্তী। তাঁর সংস্পর্শে এসে সূর্য সেন আরও প্রজ্ঞাবান হয়ে ওঠেন। বিপ্লব মানে যে একটা সর্বাত্মক চেতনা, এমন একটা ধারণার জন্ম হয় সূর্য সেনের মধ্যে। হটকারী সিদ্ধান্তের দ্বারা বিপ্লবকে দীর্ঘস্থায়ী করা সম্ভব নয়। জ্যোতিবাবু বারবার একথাই বলতেন।
 
তখন থেকেই সূর্য সেন ভবিষ্যতে বিপ্লবী হবার পরিকল্পনা গ্রহণ করলেন। স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করার পর ফিরে এলেন নিজের গ্রামে। যোগ দিলেন উমাতারা উচ্চ বিদ্যালয়ে। প্রিয় বিষয় ছিল অঙ্ক। ঘণ্টার পর ঘণ্টা এক মনে অঙ্ক কষতেন। নিছক জীবিকার জন্য তিনি শিক্ষকতাকে বেছে নেননি। তিনি চেয়েছিলেন এমন একদল অনুগামী ছাত্রসমাজ তৈরি করতে, যাদের অন্তরে বিপ্লবের আগুনশিখা অনির্বাণ থাকবে। তাদের চোখের তারায় আঁকা হবে ভবিষ্যৎ ভারতের স্বপ্নের দিশা। কে
 
এই কাজে সূর্য সেন অনেকটা সফল হয়েছিলেন। আন্তরিক ব্যবহারের জন্য তিনি অল্প দিনের মধ্যেই সকলের প্রিয়পাত্র হয়ে উঠলেন। ছাত্ররা তখন তাঁকে মাস্টারদা নামে সম্বোধন করছে। ধীরে ধীরে চট্টগ্রামের সর্বত্র মাস্টারদার খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ল।অনুগামী ছাত্রসমাজ তৈরি করার পাশাপাশি সূর্য সেন আর একটি কাজ করেছিলেন। সময় এবং সুযোগ পেলেই তিনি সমাজ সেবার কাজে আত্মনিয়োগ করতেন। চট্টগ্রাম সমুদ্রোপকূলবর্তী শহর, মাঝে মধ্যে এখানে সামুদ্রিক ঝড়ের তাণ্ডব লক্ষ্য করা যায়। হাজার হাজার মানুষকে গৃহহীন হতে হয়। অনেকে অনাহারে অর্ধাহারে থাকতে বাধ্য হয়। সূর্য সেন এসব বন্যা এবং ঝড়ের দ্বারা আক্রান্ত মানুষদের জন্য ত্রাণ কমিটি খুললেন। যখনই প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের খবর পেতেন, তখনই সেখানে ছুটে যেতেন।
 
সেই বয়েসেই সূর্য সেন বুঝতে পেরেছিলেন যে, সশস্ত্র সংগ্রাম ছাড়া ব্রিটিশদের দেশচ্যুত করা সম্ভব নয়। অহিংসার পথে কখনোই আমরা অভীষ্ট লাভ করতে পারব না। এবার সূর্য সেন অনুগামী হিসেবে একদল তরুণ এবং যুবককে পেলেন। এলেন রাখাল দে, সুখেন্দু দত্ত, যতীন রক্ষিত, গণেশ ঘোষ, অনন্ত সিংহ, নির্মল সেন, অম্বিকা চক্রবর্তী, গিরিজাশঙ্কর চৌধুরী, চারুবিকাশ দত্ত, রাজেন দাস প্রমুখ।
 
১৯১৭ সালে তিনি অনুশীলন সমিতি এবং যুগান্তর সমিতির আদর্শে চট্টগ্রামে একটি গুপ্ত বিপ্লবী সংস্থা গড়ে তুললেন। এই সংস্থার কাজ হল নিয়মিত অস্ত্রশস্ত্র শিক্ষা করা। শুধু তাই নয়, এই সংস্থার সদস্যরা মন্ত্রগুপ্তির শপথে দীক্ষিত হতেন। দেশের স্বার্থে জীবন উৎসর্গ করার কথা ঘোষণা করতেন। সূর্য সেন ছিলেন এই সংস্থার সর্বময় কর্তা। অত্যন্ত দক্ষ প্রশাসক ছিলেন তিনি। নিজের জীবনে যা কিছু উপার্জন করেছেন, সব দান করেছেন ওই সংস্থার জন্য।
 
স্কুলে কাজ নেবার সময় গুরুজনদের চাপে পড়ে বিয়ে করেছিলেন তিনি। তাঁর স্ত্রীর নাম পুষ্পকুন্তলা দেবী। সাধারণ গৃহস্থের মতো অর্থ সাহায্য করে স্ত্রীকে কোনোদিন সুখী করতে পারেননি। তবে মাস্টারদার বড়ো কৃতিত্ব এই যে, তিনি তাঁর স্ত্রীকেও বিরাট কর্মকাণ্ডের সঙ্গিনী করতে পেরেছিলেন। পুষ্পকুন্তলা হয়ে উঠেছিলেন অনেক বিপ্লবীর একান্ত আত্মীয়। তিনি ছিলেন সূর্য সেনের সহযাত্রিনী।
 
সূর্য সেন বঙ্কিমচন্দ্রের আনন্দমঠ-এর জীবনদর্শনকে অক্ষরে অক্ষরে অনুসরণ করে গেছেন। এই জীবনদর্শন অনুসারে এক বিরাট সংগঠিত বাহিনী গড়ে তুললেন। একটির  পর একটি ডাকাতি করা হল। ডাকাতিতে যে অর্থ পাওয়া গেল তা দিয়ে অস্ত্র কেনা হল। সূর্য সেনের বিপ্লবী জীবনের সবথেকে বড়ো কৃতিত্ব হল, চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠন। যেজন্য তিনি ইণ্ডিয়ান রিপাবলিকান আর্মি গঠন করেছিলেন। তাঁকে প্রভাবিত করেছিল আইরিশ রিপাবলিকান আর্মি।
 
১৯৩০ সালের ১৮ই এপ্রিল- আয়ারল্যাণ্ডে ইস্টার বিদ্রোহের দিন। এই দিনটিকেই সূর্য সেন নির্দিষ্ট করলেন অস্ত্রাগার লুণ্ঠনের জন্য। এই কাজে তিনি যথেষ্ট সফল হয়েছিলেন। মাষ্টারদার নেতৃত্বে চট্টগ্রাম শহর ৪৮ ঘন্টার জন্য ইংরাজশাসন মুক্ত ও স্বাধীন ছিল। জালালাবাদ পাহাড়ে বিপ্লবীদের মুখোমুখি সংঘর্ষ শেষ হবার পরেও তারা টানা তিন বছর গেরিলা যুদ্ধ চালিয়েছিলেন। ব্রিটিশ সৈন্যদের দৃষ্টি থেকে মাষ্টারদাকে আড়ালে রাখার উদ্দেশ্যেই বিপ্লবীরা এই যুদ্ধ চালিয়েছিলেন। বেশ কয়েকবার গ্রেপ্তারের হাত থেকে অলৌকিকভাবে রক্ষা পেয়েছেন মাষ্টারদা। কিন্তু শেষ রক্ষা হল না। এক জ্ঞাতি ভাইয়ের বিশ্বাসঘাতকতায় সূর্য সেনকে ধরা পড়তে হয়। ১৯৩৩ সালের ১৬ই ফেব্রুয়ারি এই দুঃখজনক ঘটনাটি ঘটে।
 
ব্রিটিশ সরকারের আদালতে বিচারের নামে হল প্রহসন। বীর বিপ্লবী সূর্য সেনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হল। ১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দের ১২ই জানুয়ারি সূর্য সেনের ফাঁসি হয়।ফাঁসির আগের দিন সূর্য সেন প্রিয় দেশবাসীকে উদ্দেশ্য করে একটি মর্মস্পর্শী চিঠি লিখেছিলেন। তিনি লিখেছিলেন—

"ফাঁসির রজ্জু আমার মাথার ওপর ঝুলছে। মৃত্যু আমার দরজায় কড়াঘাত করছে। এই তো আমার মৃত্যুকে বন্ধুর মতো আলিঙ্গন করার সময়। আমার ভাইবোন, তোমাদের সবার উদ্দেশ্যে বলছি, আমার বৈচিত্র্যহীন জীবনের একঘেয়েমিকে তোমরা ভেঙে দাও, আমাকে উৎসাহ দাও। এই আনন্দময় পবিত্র গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে আমি তোমাদের জন্য কী রেখে গেলাম, শুধু একটিমাত্র জিনিস, তাহল আমার স্বপ্ন। একটি সোনালি স্বপ্ন। এই শুভ মুহূর্তে আমি প্রথমে স্বপ্ন দেখেছিলাম। উৎসাহ ভরে সারাজীবন তার পেছনে উন্মত্তের মতো ছুটে ছিলাম। জানি না, এই স্বপ্নকে কতটুকু সফল করতে পেরেছি।
 
আমার আসন্ন মৃত্যুর কষ্ট যদি তোমাদের মনকে এতটুকু স্পর্শ করে, তবে আমার এই সাধনাকে তোমরা তোমাদের অনুগামীদের মধ্যে ছড়িয়ে দাও, যেমন আমি ছড়িয়ে দিয়েছিলাম তোমাদের মধ্যে।বন্ধুগণ, এগিয়ে চলো, কখনও পিছিয়ে যেও না। দাসত্বের দিন চলে যাচ্ছে। স্বাধীনতার লগ্ন আগত, ওঠো, জাগো। জয় আমাদের সুনিশ্চিত!"শেষ পর্যন্ত সূর্য সেনের সেই স্বপ্ন সফল হয়েছিল। কিন্তু তখন তিনি দূর আকাশের একটি তারা হয়ে গেছেন। 

COMMENTS

নাম

Android,6,Computer,23,Internet,5,Mcq Seet,8,Mcq Test,2,Multimedia,3,Other,19,Poet,36,Police,1,Preparation,40,Quiz,2,Revolutionary,5,School,46,Scientist,4,Tet,6,Word,6,
ltr
item
Guides365: ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে এক উজ্জ্বল ব্যক্তিত্ব মাস্টারদা সূর্য সেন Masterda Surya Sen is a brilliant figure in the history of India's freedom struggle
ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে এক উজ্জ্বল ব্যক্তিত্ব মাস্টারদা সূর্য সেন Masterda Surya Sen is a brilliant figure in the history of India's freedom struggle
ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে সূর্য সেন এক উজ্জ্বল ব্যক্তিত্ব।চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠন, জালালা বাদের যুদ্ধ প্রভৃতি দুঃসাহসী ঘটনার সাথে যে বীরস
https://s3.eu-central-1.amazonaws.com/s3.builder.andromo/publisher-718254/project-1950950/custompage_1643569018_7afe1493c5/1643652773454.jpg
Guides365
https://www.guides365.in/2022/03/%20%20.html
https://www.guides365.in/
https://www.guides365.in/
https://www.guides365.in/2022/03/%20%20.html
true
1642768254594531261
UTF-8
Loaded All Posts Not found any posts VIEW ALL Readmore Reply Cancel reply Delete By Home PAGES POSTS View All RECOMMENDED FOR YOU LABEL ARCHIVE SEARCH ALL POSTS Not found any post match with your request Back Home Sunday Monday Tuesday Wednesday Thursday Friday Saturday Sun Mon Tue Wed Thu Fri Sat January February March April May June July August September October November December Jan Feb Mar Apr May Jun Jul Aug Sep Oct Nov Dec just now 1 minute ago $$1$$ minutes ago 1 hour ago $$1$$ hours ago Yesterday $$1$$ days ago $$1$$ weeks ago more than 5 weeks ago Followers Follow THIS PREMIUM CONTENT IS LOCKED STEP 1: Share to a social network STEP 2: Click the link on your social network Copy All Code Select All Code All codes were copied to your clipboard Can not copy the codes / texts, please press [CTRL]+[C] (or CMD+C with Mac) to copy