Bankimchandra Chattopadhyay, the greatest novelist of Bengaউনবিংশ শতাব্দীতে বাংলা সাহিত্যের শ্রেষ্ঠ ঔপন্যাসিক সাহিত্যসম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
উনবিংশ শতাব্দীতে বাংলা সাহিত্যের শ্রেষ্ঠ ঔপন্যাসিক সাহিত্যসম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
উনবিংশ শতাব্দীতে বাংলা সাহিত্যের শ্রেষ্ঠ ঔপন্যাসিক সাহিত্যসম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়।বঙ্কিমচন্দ্র ১৮৩৮ খ্রিস্টাব্দে (২৬জুন) জন্মগ্রহণ করেন ।'Rajmohan's Wife' পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল 'Indian Field' নামে একখানি সাপ্তাহিক পত্রে ১৮৬৪ খ্রিস্টাব্দে ধারাবাহিক ভাবে বঙ্কিমচন্দ্রের প্রথম উপন্যাস। প্রথম উপন্যাসটি ('Rajmohan's Wife') ইংরেজি ভাষায় লেখা ।
বঙ্কিমচন্দ্র মোট উপন্যাস লিখেছিলেন - জীবিতকালের শেষ বাইশ বছরের মধ্যে (১৮৬৫-৮৭) মােট চোদ্দোখানি উপন্যাস।তার লেখা প্রথম বাংলা উপন্যাস কী ‘দুর্গেশনন্দিনী (১৮৬৫)খ্রিস্টাব্দে।এবং তার লেখা শেষ /সর্বশেষ বাংলা উপন্যাস 'সীতারাম’ (১৮৮৭)খ্রিস্টাব্দে।
সন-তারিখের ক্রমানুসারে বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাসগুলি হল -‘দুর্গেশনন্দিনী (১৮৬৫) খ্রিস্টাব্দে, কপালকুণ্ডলা (১৮৬৬) খ্রিস্টাব্দে, মৃণালিনী (১৮৬৯)খ্রিস্টাব্দে,‘বিষবৃক্ষ’(১৮৭৩)খ্রিস্টাব্দে,‘ইন্দিরা'(১৮৭৩) খ্রিস্টাব্দে,
‘যুগালাগুরীয় (১৮৭৪) খ্রিস্টাব্দে, 'চন্দ্রশেখর' (১৮৭৫)খ্রিস্টাব্দে, রজনী' (১৮৭৭)খ্রিস্টাব্দে, কৃষ্ণকান্তের উইল'(১৮৭৮) খ্রিস্টাব্দে, ‘রাজসিংহ '(১৮৮২)খ্রিস্টাব্দে,‘আনন্দমঠ (১৮৮৪) খ্রিস্টাব্দে, “দেবীচৌধুরাণী’ (১৮৮৪), রাধারাণী’ (১৮৮৬) খ্রিস্টাব্দে, 'সীতারাম’ (১৮৮৭) খ্রিস্টাব্দে।
বঙ্কিমচন্দ্রের বিবিধ ও বিচিত্র ধরনের উপন্যাসগুলিকে অভ্যন্তরীণ বৈশিষ্ট্য ধরে মােটামুটি তিনটি ভাগে ভাগ করা যায়। ভাগগুলি হল - (ক) ইতিহাস ও রােমান্সধর্মী উপন্যাস, (খ) তত্ত্ব ও দেশাত্মবােধক উপন্যাস, (গ) সমাজ ও গার্হস্থ্যধর্মী উপন্যাস।
বঙ্কিমচন্দ্রের রচনাবলী প্রেক্ষাপটঃ-
বঙ্কিমচন্দ্রের ইতিহাস ও রােমান্সধর্মী রচনা ‘দুর্গেশনন্দিনী (১৮৬৫)খ্রিস্টাব্দে, কপালকুণ্ডলা' (১৮৬৬)খ্রিস্টাব্দে, মৃণালিনী' (১৮৬৯)খ্রিস্টাব্দে, ‘যুগলাঙ্গরীয়' (১৮৭৪)খ্রিস্টাব্দে,‘চন্দ্রশেখর (১৮৭৫)খ্রিস্টাব্দে, ‘রাজসিংহ' (১৮৮২)খ্রিস্টাব্দে ও ‘সীতারাম’ (১৮৮৭)খ্রিস্টাব্দে। এবং বঙ্কিমচন্দ্রের তত্ত্ব ও দেশাত্মবােধক উপন্যাস
‘আনন্দমঠ (১৮৮৪)খ্রিস্টাব্দে, দেবী চৌধুরাণী (১৮৮৫)খ্রিস্টাব্দে। সমাজ ও গার্হস্থ্যধর্মীউপন্যাস ‘বিষবৃক্ষ (১৮৭৩)খ্রিস্টাব্দে, কৃষ্ণকান্তের উইল (১৮৭৮)খ্রিস্টাব্দে, রজনী (১৮৭৭)খ্রিস্টাব্দে।
বঙ্কিমচন্দ্রের বিভিন্ন উপন্যাস এর প্রধান প্রধান চরিত্রঃ-
“ইন্দিরা’, ‘যুগলাঙ্গরীয়,' 'রাধারাণী', ‘মৃণালিনী' প্রভৃতি রচনা গুলিকে নভেলেট বা বড়গল্প বলা যেতে পারে ।‘মতিবিবি’ ও ‘নবকুমার চরিত্র দুটি বঙ্কিমচন্দ্রের কপালকুণ্ডলা' উপন্যাসে পাওয়া যায় ও ‘হেমচন্দ্র’, ‘পশুপতি’, ‘মনােরমা ‘মূণালিনী' উপন্যাসের চরিত্র, ‘প্রতাপ’ ও ‘শৈবালিনী’ চরিত্র দুটি চন্দ্রশেখর' উপন্যাসে আছে / ‘শ্রী' - ‘সীতারাম’ উপন্যাসের চরিত্র ।
বঙ্কিমচন্দ্র যতই প্রতিভাবান ঔপন্যাসিক হােন না কেন,কেউ কেউ মনে করেন যে, ঐতিহাসিক উপন্যাসে তিনি বহুথলে ইতিহাসকে উপেক্ষা করেছেন—এই উক্তির আলোচনা করতে গিয়ে বলতে হয়- বঙ্কিমচন্দ্র ঐতিহাসিক তথ্য সবসময় গ্রহণ না করলেও ঐতিহাসিক রসসৃষ্টিতে তার সমকক্ষ বাংলাদেশে দ্বিতীয় কেউ নেই। বিশুদ্ধ ইতিহাস লেখা ঐতিহাসিক ঔপন্যাসিকের কাজ নয়, সে কাজ করবেন তথ্যানুসন্ধিৎসু ঐতিহাসিক। ঐতিহাসিক ঔপন্যাসিক ইতিহাসের ছায়ানটে নরনারীর জীবনায়নের মধ্য দিয়ে বিস্মৃত বিবর্ণ যুগকে প্রাণবান করে তুলবেন। সেদিক দিয়ে বঙ্কিমচন্দ্র এখনও অতুলনীয়।
বঙ্কিমচন্দ্রের ‘কপালকুণ্ডলা' উপন্যাসের বিষয়বস্তু ঃ-
প্রকৃতি-দুহিতা কপালকুণ্ডলা আরণ্যক জীবন ত্যাগ করে একদিন সামাজিক জীবন ও বিবাহবন্ধনে বাঁধা পড়ে। পরে এক দুয়ে নির্দেশে কীভাবে ধীরে ধীরে মৃত্যু পরিণামের দিকে এগিয়ে গেল,কীভাবে তার স্বামী নবকুমার ঘটনাচক্রকে অজ্ঞাতসারে বেগবান করে তুলল, এই সমস্ত বিচিত্র কাহিনি ও চরিত্র এই উপন্যাসে অপূর্ব দক্ষতার সঙ্গে বর্ণিত হয়েছে।
আনন্দমঠ উপন্যাসের গুরুত্ব ঃ-
‘আনন্দমঠ উপন্যাসের মধ্যে তত্ত্বকথা থাকলেও এর প্রধান ও প্রবল সুর দেশাত্মবােধ। উত্তরবঙ্গেরসন্ন্যাসী বিদ্রোহকে কাল্পনিক গৌরবময় ভূমিকায় স্থাপন করে ।
সাহিত্যসম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়কে বাংলা সাহিত্যের সর্বশ্রেষ্ঠ ঔপন্যাসিক বলা যায় কি এ ব্যাপারে রবীন্দ্রনাথ ও শরৎচন্দ্রের কথা মনে রেখে বলতে পারি, বাংলা সাহিত্যের সর্বশ্রেষ্ঠ ঔপন্যাসিক বঙ্কিমচন্দ্র । বিষয়বৈচিত্র্যে, রচনাপ্রকরণে, ঔপন্যাসিকের জীবনদর্শনে, পরবর্তী যুগে প্রসারিত প্রভাবে তিনি এখনও অতুলনীয়। রবীন্দ্রনাথ কোনাে কোনাে ক্ষেত্রে বঙ্কিমচন্দ্রের পথ ছেড়ে শাখাপথে অগ্রসর হয়েছেন। শরৎচন্দ্র তাঁর পথ সম্পূর্ণরূপে পরিত্যাগ করে বরং বিপরীতপথে যাত্রা করেছেন, কিন্তু তাকে এড়িয়ে যাবার উপায় নেই কথাসাহিত্যে কত বৈচিত্র্য, কত কৌশল, কত নতুনত্ব আবিষ্কৃত হচ্ছে, কিন্তু বঙ্কিমচন্দ্র যে বিশাল হিমালয়ের মতাে বাংলা উপন্যাসের শীর্ষদেশে দাঁড়িয়ে আছেন তা অনস্বীকার্য।
বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাসের গঠনরীতির বিশিষ্টতাঃ-
বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাসে সর্বত্র পূর্ণাঙ্গ সুবলয়িত কাহিনি-নির্মিতি ঘটেছে। একটি সুনির্দিষ্ট সমস্যার কেন্দ্রে সমগ্র কাহিনিটি আবর্তিত হয়, আদি-মধ্য-অন্ত সুস্পষ্ট ভাবে চিহ্নিত করা যায়। উপকাহিনি মূল কাহিনিকে নানাভাবে বিকশিত ও তাৎপর্যবহ করে তােলে। বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস ঘটনাবহুল। ঘটনায় নাটকীয় চমক ও চমৎকারিত্ব, উত্থান-পতনময় সংঘাত সৃষ্টির দিকে তাঁর প্রবণতা আছে ,আবার কৃচিৎ অলৌকিকতার স্পর্শ নিয়ে রহস্যের জাল বিস্তারও তিনি করেছেন। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বঙ্কিমচন্দ্রের কবিত্ব ।
উপন্যাস সাহিত্যে বঙ্কিমচন্দ্রের মৌলিকতা ঃ-
বঙ্কিমচন্দ্রের হাতে উপন্যাসের শিল্পসমৃদ্ধপূর্ণ প্রতিষ্ঠা। তিনি ইংরেজি উপন্যাস সাহিত্যের আদর্শ অনুসরণ করলেও মৌলিক কল্পনা ও রচনাগুণেই শ্রেষ্ঠ। তিনি ইতিহাসশ্রিত রােমান্স, তত্ত্ব ও দেশাত্মবােধক এবং সমাজ ও গাথ্যিধর্মী উপন্যাস রচনা করেছেন।
COMMENTS